রাজধানীর কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে ‘আপন ভুবন’ বৃদ্ধাশ্রম। যেখানে ঠাঁই হয়েছে রাস্তায় পড়ে থাকা ২৯ জন মায়ের। তাদের থাকা-খাওয়া-চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা-দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক এই আশ্রমটি। বৃদ্ধাশ্রম বলতে আমরা সাধারণত বৃদ্ধ মা-বাবাদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয়স্থল বুঝি। আপন ভুবনের ব্যতিক্রমী বিষয়টি হলো এখানে থাকা মায়েদের নেই কোনো ঘর পরিচয়। এমনই আরেকটি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে উত্তরখানের কড়াইহাটিতে, যার নাম আপন নিবাস।
আপন ভুবনে কথা হয় জোহরার সাথে, যাকে জোহরা মা বলে ডাকেন সবাই। স্মৃতি বিলুপ্তির পথে গেলেও এখানে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন বুঝা যায়। সব সময় ফিটফাট থাকতে পছন্দ করেন জোহরা। আড়াই বছর আগে জুরাইন থেকে একজন স্বেচ্ছাসেবী হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল এই বৃদ্ধাকে আপন ভুবনে দিয়ে গেছেন বলে জানান আপন ভুবনের কো-অর্ডিনেটর জারা জামান।
নব্বইয়ের কাছাকাছি বয়সী হাজেরা মনে করতে পারেন না কিছুই। অপরিচিত কাউকে দেখলে প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও মুহূর্তে আপন করে নেন। কথা বলতে কষ্ট হলেও বুকে জড়িয়ে আপন মনে কথা বলতে থাকেন হাজেরা। দুই বছর আগে মিরপুর থেকে এলাকাবাসী দিয়ে গেছেন বলে জানান জারা।
আরও পড়ুন: এক জোড়া মুরগির দাম ৭০ হাজার টাকা!
আরেক মা নুরজাহান দুই বছর ধরে আছেন আপন ভুবনে। তিনি বলেন, ‘একটা ছেলে ছিল, হারিয়ে গেছে। স্বামীও নেই। বাড়িওয়ালা এখানকার খোঁজ পেয়ে এনে দিয়ে গেছেন। এখানে অনেক ভালো আছি। এখানে সবাই খুব ভালো, আমাদের অনেক ভালোবাসে। কি খেলাম, কি পরলাম সব খেয়াল রাখে। আমার কেউ নাই, এরাই সব।’
অসুস্থতায় ডাক্তার পাওয়া যায় কি না জানতে চাইলে নুরজাহান বলেন 'ডাক্তার সব সময় থাকে। দুইজন নার্স আছেন। বড় কিছু হলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।'
আপন ভুবনের চিকিৎসক ফাতেমা ফেরদৌসি বলেন, 'বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জেনারেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাকি সময়টা আপন ভুবনে বৃদ্ধা মায়েদের কাছে থাকি।’
এরপর কথা হয় আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের জেনারেল সেক্রেটারি রুমি রহমানের সঙ্গে। ইউএনবিকে তিনি বলেন এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার গল্প।